পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২


পর্নোগ্রাফি তৈরির অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে ‘পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ বিল-২০১২’ পাস হয়েছে সংসদে। এ আইনে পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে কারো মর্যাদাহানি বা কাউকে ব্ল্যাকমেইল করা হলে, এমনকি এ জাতীয় কিছু সংরক্ষণ বা পরিবহন করা হলেও দুই থেকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং এক থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি বিলটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিপরিষদ। পরে ২৯ জানুয়ারি বিলটি সংসদে উত্থাপন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনের ১৮তম কার্যদিবসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাব নাকচ হয়।

কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফি উৎপাদন বা এ উদ্দেশ্যে অংশগ্রহণকারী সংগ্রহ করে চুক্তিপত্র তৈরি করলে অথবা কোনো নারী, পুরুষ বা শিশুকে প্রলোভন দেখিয়ে তাকে জানিয়ে বা না জানিয়ে স্থির, ভিডিও বা চলচ্চিত্র ধারণ করলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে বিলে।
শিশুদের ব্যবহার করে পর্নোগ্রাফি উৎপাদন ও বিতরণকারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। এদের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করার বিধান রয়েছে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণসংবলিত বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘বর্তমানে চলচ্চিত্র, স্যাটেলাইট, ওয়েবসাইট ও মোবাইলের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফি মারাত্মক ব্যাধির মতো দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। পর্নোগ্রাফি যুবসমাজকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর শিকার হয়ে অনেক নারী, পুরুষ ও শিশুকে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। কিন্তু এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো আইন না থাকায় অপরাধ রোধ ও অরপাধীদের বিচার করা সম্ভব হচ্ছে না। বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।’

বিলে পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞা, বিচারিক আদালত, বিচার ও আপিল পদ্ধতি, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের শাস্তি, তদন্ত এবং তল্লাশি পদ্ধতি ও অপরাধের আমলযোগ্যতার বিষয়টি সনি্নবেশিত করা হয়েছে বলে মন্ত্রী উল্লেখ করেন।

বিলে পর্নোগ্রাফির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘যৌন উত্তেজনা সৃষ্টিকারী কোনো অশ্লীল সংলাপ, অভিনয়, অঙ্গভঙ্গি, নগ্ন বা অধনগ্ন নৃত্য যা চলচ্চিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও ভিজুয়ালচিত্র, স্থিরচিত্র, গ্রাফিকস বা অন্য কোনো উপায়ে ধারণকৃত ও প্রদর্শনযোগ্য এবং যার কোনো শৈল্পিক বা শিক্ষাগত মূল্য নেই।’
এ ছাড়া ‘যৌন উত্তেজনা’ সৃষ্টিকারী অশ্লীল বই, সাময়িকী, ভাস্কর্য, কল্পমূর্তি, মূর্তি, কার্টুন বা লিফলেট বা এগুলোর নেগেটিভ বা সফট ভার্সনও পর্নোগ্রাফির আওতাভুক্ত হবে। বিলে বলা হয়েছে, ‘পর্নোগ্রাফি উৎপাদন, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ, বহন, সরবরাহ, ক্রয়-বিক্রয় ও প্রদর্শন করা যাবে না।’

পর্নোগ্রাফির অভিযোগ পাওয়া গেলে তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) বা তাঁর সমমর্যাদার কর্মকর্তাকে দিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করতে হবে। তদন্তের প্রয়োজনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে আরো ১৫ দিন এবং আদালতের অনুমোদন পাওয়া গেলে আরো ৩০ দিন পর্যন্ত সময় নেওয়া যাবে। বিলের ৬ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, এ জাতীয় অপরাধের সঙ্গে জড়িত কোনো ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেপ্তার বা কোনো পর্নোগ্রাফি সরঞ্জাম জব্দ করার জন্য তল্লাশি চালানো যাবে।

পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২

( ২০১২ সনের ৯ নং আইন )

[৮ মার্চ, ২০১২ ]

নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধকল্পে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণের
উদ্দেশ্যে প্রণীত আইন

যেহেতু পর্নোগ্রাফি প্রদর্শনের ফলে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটিতেছে এবং বিভিন্ন অপরাধ সংঘটিত হইতেছে ও সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাইতেছে; এবং
যেহেতু নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা সমীচীন ও প্রয়োজনীয়;
সেহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন প্রণয়ন করা হইলঃ—

সূচী

ধারাসমূহ

১। সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রবর্তন
২। সংজ্ঞা
৩। আইনের প্রাধান্য
৪। পর্নোগ্রাফি সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ ইত্যাদি নিষিদ্ধ
৫। তদন্ত
৬। তল্লাশী, জব্দ ইত্যাদি
৭। বিশেষজ্ঞ মতামতের সাক্ষ্যমূল্য
৮। দণ্ড
৯। কতিপয় ক্ষেত্রে আইনের অপ্রযোজ্যতা
১০। অপরাধের আমলযোগ্যতা
১১। বিচার পদ্ধতি
১২। আপিল
১৩। মিথ্যা মামলা, অভিযোগ দায়ের ইত্যাদির দণ্ড
১৪। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা
১৫। আইনের ইংরেজিতে অনূদিত পাঠ

বিস্তারিত দেখুন– পর্ণগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২

দয়া করে আপনার মন্তব্য লিখুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  Change )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  Change )

Connecting to %s